Pages

Wednesday, May 31, 2017

কান্তজীর মন্দির | Beautiful Dinajpur |

দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহিক কান্তজির মন্দির 



ঢাকা থেকে দূরত্ব অনেক। প্রায় ৮ ঘণ্টা ভ্রমণের পর পৌঁছতে হয় দিনাজপুরে। সেখান থেকে ৩০ মিনিটের পথ কান্তজীউ মন্দির বা কান্তজীর মন্দির বা কান্তনগর মন্দিরের। দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে, দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরতœ মন্দির নামেও পরিচিত। কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এ মন্দিরের ৯টি চূড়া বা রতœ ছিল। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট।

 ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি। মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজারের মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সব খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত।
 
মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে। 




দিনাজপুরের বিখ্যাত রামসাগর | Beautiful Dinajpur |

চলো না রামসাগর থেকে একবার ঘুরে আসি 


রামসাগর কোন সাগর নয় তারপরেও তার নাম রামসাগর। সৌন্দর্য্য এবং আয়তনের দিক থেকে রামসাগর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দীঘি। এ দীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জাতীয় ‍উদ্যান। রামসাগর ও জাতীয় এই উদ্যানকে ঘিরে প্রতিদিন সারা দেশ থেকে ভ্রমন পিঁপাসু হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায়। বন্ধুরা তোমরা যারা দিনাজপুর ভ্রমন করতে যাবে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, দিনাজপুর গেলে কিন্তু রামসাগর দেখতে যাওয়া চাই-ই-চাই। কারণ রামসাগর না গেলে দিনাজপুর ভ্রমনের আনন্দটাই মাটি। চলো তাহলে ঘুরে আসি দিনাজপুর জেলার রামসাগর দীঘি থেকে।
 
দিনাজপুর  সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুর শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে এই দিঘিটির অবস্থান। শুধুমাত্র জলাধার বা ‌ঐতিহাসিক কীর্তি নয়, এক বিশাল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী একটি মনোরম পার্ক রয়েছে এখানে। পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ ১৭৫০-১৭৫৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে রামসাগর দীঘিটি খনন করান এবং তার নামেই এর নামকরণ করা হয়।

কি দেখবেন রামসাগর গিয়েঃ
এ চারপাশে সবুজ বৃক্ষরাজি ঘেরা রামসাগরকে দূর থেকে অরণ্য ভেবে ভুল করতে পারেন অনেকে। ইট বিছানো উঁচু রাস্তাটিতে উঠে বাঁ দিকে চোখ ফেরাতেই বিস্তীর্ণ জলরাশি চোখের সামনে মূর্ত হয়। অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় সাগরের মতো বিশাল দিঘিটির দিকে। স্থির, স্বচ্ছ রূপ নিয়ে মনোহরণ করতে থাকে। মূল দিঘির চারপাশে উঁচু টিলা। টিলাজুড়ে নানা জাতের গাছগাছালি। গাছগুলোতে জমে পাখির আড্ডা। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠছে চারপাশ। রয়েছে (রামসাগর জাতীয় পার্ক) চারিদিক প্রদক্ষিণ করার রাস্তা। নানা ধরনের পুরানো এবং নতুন গাছের সমাহারে সাজানো রয়েছে চারিদিক। রয়েছে পরবর্তীতে কৃত্রিমভাবে বানানো নানা ধরনের পশু পাখির প্রকৃতি। এছাড়া কিছু হরিণও আপনার চোখে পড়বে ।এছাড়ও দিঘিতে ভেসে থাকা অজস্র শাপলা ফুল রামসাগরের সৌন্দর্য্যেকে দিয়েছে নান্দনিকতার ছোঁয়া যা সহজেই আপনার মন কাড়তে সক্ষম হবে।

দিঘির উত্তর দিকে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত লাল ইটের একটি প্রাচীন স্থাপনা দেখা যায়। এটি নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে। কারও মতে এটি একটি মন্দির আবার কারও মতে এটি একটি বিশ্রামাগার।

 











রামসাগর নামটি কিভাবে আসলো?
কথিত আছে, বহু বছর আগে রাজা রামনাথ রাজ্যের মানুষের পানির অভাব মেটানোর জন্য একটি দীঘি  খনন করা শুরু করেন। কিন্তু যতই খনন করা হোক না কেন, দীঘি দিয়ে পানি উঠে না। কেউ কোনো কারণ বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ একদিন রাজা স্বপ্ন দেখেন, দীঘির মাঝে একটি ছোট মন্দির স্থাপন করে রাজা পূজা করলে দীঘিতে পানি উঠবে। স্বপ্নমতে রাজা রামনাথ মন্দির স্থাপন করে পূজা করলে দীঘিতে পানি উঠে এবং রাজা রাম পানিতে ডুবে মারা যান। পরে তার স্মৃতিস্বরূপ এই স্থানের নাম হয়েছে ‘রামসাগর’।

রামসাগর ভ্রমনের প্রয়োজনীয় তথ্য
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে রামসাগর জাতীয় উদ্যান । এখানে প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২ টাকা। নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে গাড়ি নিয়েও জায়গাটিতে প্রবেশ করা যায়। রামসাগরে  বাহনের প্রবেশ মূল্য রিকশা ৫ টাকা, কার বা জিপ ৩৫ টাকা, সাধারণ মাইক্রোবাস ৬০ টাকা, বড় মাইক্রোবাস ৭৫ টাকা। নিজস্ব বাহন না থাকলে দিনাজপুর শহর থেকে ব্যাটারি চালিত রিকশায় রামসাগর আসতে সময় লাগে প্রায় ত্রিশ মিনিট। ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা।

কীভাবে যাবেন,কেমন খরচ?
ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেন দুই পথেই যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী (Dinajpur) বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এ পথে নাবিল পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৯০০ টাকা।
এ ছাড়া হানিফ এন্টারপ্রাইজ,এস আর ট্রাভেলস,কেয়া পরিবহন, এস এ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহনের নন-এসি বাসও চলাচল করে এ পথে। ভাড়া ৫০০-৫৫০ টাকা।
 ঢাকা থেকে আসাদগেট, কলেজগেট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, টেকনিক্যাল মোড় অথবা গাবতলী হতে নাবিল, বা বাবলু এন্টারপ্রাইজের চেয়ার কোচে করে সরাসরি দিনাজপুর । প্রায় সারাদিন ৩০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরপর গাড়িগুলো ছেড়ে যায়। তা ছাড়া উত্তরা হতেও কিছু পরিবহন দিনাজপুর যায়।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে। আর আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে। ঢাকা থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে মঙ্গল ও বুধবার। ভাড়া শোভন সিট ১৮৫ টাকা,শোভন চেয়ার ২৫০, প্রথম শ্রেণি চেয়ার ৩৫০, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৫৩৫, এসি চেয়ার ৬১৮, এসি বার্থ ৮৯৭ টাকা।

দিনাজপুর (Dinajpur) থেকে ঢাকার উদ্দেশে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আর একতা এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে। দিনাজপুর (Dinajpur) থেকে একতা ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস বন্ধ থাকে যথাক্রমে সোমবার ও বুধবার।

কোথায় থাকবেন, কেমন খরচ? 
 রামসাগরের ভেতরের এক অংশে রয়েছে বন বিভাগের একতলাবিশিষ্ট একটি বাংলো। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখানে থাকতে পারেন। এখানে থাকতে হলে স্থানীয় বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিতে হয়। একতলা ভবনটিতে তিনটি সাধারণ এবং একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আছে। প্রতিটি সাধারণ কক্ষের ভাড়া প্রতি রাত ৫০০ টাকা এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা। নিজেদেরই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। এছাড়াও দিনাজপুর শহরে রয়েছে কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল। অল্প খরচেই সেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকা যায়।কাছ থেকে রাম সাগরের লোভনীয় সৌন্দর্য্য উপভোগ করার জন্য এটি একটি আদর্শ হোটেল।
   
এছাড়া দিনাজপুর শহরের কোন হোটেলে থাকতে পারেন। দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশন এর মোটেলসহ অনেকগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হোটেল রয়েছে। আপনি চাইতে এখানে থাকতে পারেন। হোটেল ডায়মন্ড, পূর্নভবা, হোটেল আল রশিদ উল্লেখযোগ্য।

হোটেল বুকিং সুবিধা 

দিনাজপুর (Dinajpur) শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল (০৫৩১-৬৪৭১৮)। এ ছাড়া ঢাকায় পর্যটনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দিতে পারেন। 
ফোন :৯৮৯৯২৮৮-৯১ ।

দিনাজপুরের (Dinajpur) পর্যটন মোটেলে এসি টুইনবেড ১৫০০ টাকা এবং এসি টুইনবেড ডিলাক্স কক্ষ ১৮০০ টাকা। এ ছাড়া দিনাজপুরের (Dinajpur) অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেলে ১০০-১২০০ টাকায় রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা আছে।

কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল হলো—মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড (০৫৩১-৬৪৬২৯),নিমতলায় হোটেল আল রশিদ (০৫৩১-৬৪২৫১), হোটেল নবীন (০৫৩১-৬৪১৭৮), হোটেল রেহানা (০৫৩১-৬৪৪১৪), নিউ হোটেল (০৫৩১-৬৮১২২)।

বিশেষ খাবার গুলোঃ

দিনাজপুর (Dinajpur) এর বিখ্যাত এবং খুব জনপ্রিয় খাবার  লিচু,চিড়া,পাপড় খেতে ভুলবেন না।

বন্ধুরা বিস্তারিত জানিয়ে দিলাম দিনাজপুরের রামসাগর সম্পর্কে। এবার তাহলে ভ্রমনের সরঞ্জামাদি নিয়ে বেরিয়ে পড়। সাথে আমাকে নিতে কিন্তু ভুল করনা। না না আমাকে না তোমার ক্যামেরাটাকে। তোমাদের ভ্রমন নিরাপদ হোক। শুভকামনা রইল...
 

Monday, May 15, 2017

দিনাজপুরের লিচু

দিনাজপুর জেলা লিচুর জন্য বিখ্যাত। লিচুর রাজ্যের দিনাজপুরের লিচু অন্য এলাকার লিচুর চেয়ে আলাদা। গোলাপী এই লিচু মুখে দিলেই ঘ্রাণ আর মিষ্টি রসে মন প্রাণ ভরে যায়।


গ্রীষ্মের মধুমাস হিসেবে পরিচিত জ্যৈষ্ঠ মাসে দিনাজপুরের সুস্বাদু ও দেশব্যাপী খ্যাত লিচু গাছগুলোতে 
ঝুলছে থোকায় থোকায় লিচু। আর এই ফল দেশব্যাপী জনপ্রিয় ও লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে লিচুর আবাদ। তবে ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবারে ঝড়ে গেছে লিচু। তার পরেও জেলার লিচু বাগানে রয়েছে পর্যাপ্ত লিচু। লিচুর ফলন বাড়াতে মৌসুমের শুরুতে বাগানের পরিচর্যা ও কীটনাশকমুক্ত ভিটামিন স্প্রে প্রত্যেক গাছে প্রয়োগের কারণেই লিচুর আকার ভালোই হয়।


মধুমাসের ফল হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের লিচুর বাগানগুলোর গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় লিচু। দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঠালি উল্লেখযোগ্য। প্রতিবছর এ জেলা থেকে লিচু দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু সারা দেশেই ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই লিচু শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের বাইরেও আত্মীয়তা ও বিভিন্ন সখ্যতায় মধুমাসের দিনাজপুর থেকে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে পাঠানো হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরুতেই বেদেনা ও বোম্বাই জাতের লিচুতে রং আসতে শুরু করেছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই বাজারে লিচু উঠতে শুরু করবে। তবে বৈশাখ মাসের শুরু থেকেই ঝড়-বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই ঝড়ে গেছে অনেক গাছের লিচু। এখন পর্যন্ত গাছে যে পরিমাণ লিচু রয়েছে তা নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করতে কৃষকরা প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করে ভাল ফল পাওয়ার চেষ্টায় পরিচর্যা করে যাচ্ছে।
দিনাজপুরে প্রধান লিচুর বাজার পৌরসভা নিউমার্কেট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৬০টি মোকামে চলে লিচুর বেচাকেনা। গত বছরের মাদ্রাজি জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, বোম্বাই জাতের লিচু ৩০০ থেকে ৩২৫ টাকা, বেদেনা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা ও চায়না থ্রি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে।





 দিনাজপুর জেলার সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ, খানসামা, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলাসহ ১৩ উপজেলাতেই কম-বেশি লিচুর বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মাদ্রাজি, চায়না, বোম্বাই, কাঁঠালি আর দেশি জাতের লিচুতে ছেয়ে গেছে।

দিনাজপুর জেলায প্রধান প্রধান উৎপাদন এলাকাঃ


সদরঃ-
          ১। কসবা
          ২। সৈয়দপুর
          ৩। মাসিমপুর
          ৪। মাহমুদপুর
          ৫। নশিপুর
          ৬। জযদেবপুর
বিরলঃ-
          ১। মাধববাটি
          ২। রসুর শাহ পুর
          ৩। রানী পুকুর
          ৪। মংগলপুর
          ৫। মাটিআন দিঘী
          ৬। আজিমপুর
          ৭। লক্ষীপুর
          ৮। জগতপুর
          ৯। রাজুরিয়া
বীরগঞ্জঃ-
          ১। চাকাই
          ২। কল্যানী
          ৩। পাল্টাপুর
          ৪। ধূলা উড়ি
          ৫। মরিচা
          ৬। শিবরামপুর
চিরিরবন্দরঃ-
          ১। গলাহার
          ২। আরাজি গলাহার
          ৩। কাদরা
          ৪। কৃষনপুর
          ৫। জয়
বিরামপুরঃ-
          ১। শিমুলতলী
          ২। দূর্গাপুর
          ৩। মামুদপুর
          ৪। মির্জাপুর

লিচু ক্রয় বিক্রয় স্থানঃ-
          ১। কালিতলা , সদর
          ২। মাধববাটি , বিরল
          ৩। মাদারগঞ্জ হাট , চিরির বন্দর
          ৪। বীরগঞ্জহাট , বীরগঞ্জ
          ৫। মাসিমপুর, পুলহাট , দিনাজপুর সদর ।





ঘুরে আসুন দিনাজপুর থেকে এবং উপভোগ করুন দিনাজপুরের বিখ্যাত লিচু :)

স্বপ্নপুরী পার্ক (Sopno Puri Park) | Beautiful Dinajpur |

বন্ধুরা আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান দিনাজপুরের পার্ক স্বপ্ন পুরী।
 দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে পনের কিলোমিটার উত্তর দিকে কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের অধীন খালিকপুর মৌজায় বিশাল জায়গা জুড়ে স্বপ্নপুরী অবস্থিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৮৯ খৃষ্টাব্দ থেকে স্বপ্নপুরীর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর বর্তমানে স্বপ্নপুরী বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম মৎস্য জগৎ অনেক সুন্প্রাদর কৃতিক দৃশ্যবলি এবং রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন বিনোদন সুবিধা নিয়ে পার্কটি গঠিত হয়েছে।তাছাড়া এখানে রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে দশটি ভিআইপি রেস্ট হাউজ, চোদ্দটি  মধ্যম শ্রেণীর রেস্ট হাউজ ও আটটি  অন্যান্য রেস্ট হাউজ। মূল গেটে দুটি পরী আকাশের দিকে হাত তুলে আপনাকে স্বাগত জানাবে, যা সত্যিই মনকে আন্দোলিত করে তুলবে।

 













সুবিশাল এলাকা জোরে , তুলনাহীন প্রাকৃতিক  পরিবেশ। সম্পূর্ণ এলাকা জুড়ে আছে বিভিন্ন প্রকার গোলাপ,চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, রজনীগন্ধা, কসমস, লিলি,  গ্লোবাল,  গাদা-সূর্যমুখী সহ ইত্যাদি ফুল। আরও রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ঝাউগাছ, ইপিলইপিল,ওইপেং,  ক্রিসমাসট্রি, ক্যাকটাস,  ঘনসবুজ ঘাসে ঘেরা বাগানের গাছের ডালে বসেছে হাজারো রকম পাখির মেলা, যা হাজারো প্রকৃতি প্রেমিক  পর্যটক ও পরিব্রাজকদের মনোরঞ্জন এবং বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে।

শিক্ষামূলক ভ্রমণ স্বপ্নপুরী পর্যটন কেন্দ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভিন্ন মাত্রায় সজ্জিত। যার প্রমাণ স্বপ্নপুরীতে রয়েছে। যেমন শিশু পার্ক, জীবন্ত এবং কৃত্রিম চিড়িয়াখানা সহ অনেক কিছু।
 স্বপ্ন পুরী আছে পর্যটকদের নামাজ পড়ার মসজিদ এবং কারুকার্যময় অজুখানা। আরও আছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য। চোখে স্বাপ্নিক বিস্ময়তা আর অন্তরে মুগ্ধতা নিয়ে স্বপ্নপুরীর লেকে স্পিড বোটে জলবিহারে মেতে ওঠার আছে । লেকের ওপরে তৈরি করা হয়েছে কেবল কার। পর্যটকদের গোসল করার জন্য রংতুলি দিয়ে আকার মত শাপলা ঘাট। সুবিশাল স্বপ্নপুরীর স্থানে স্থানে আছে  অনেক সুন্দর সুন্দর বিশ্রাম ছাউনি। এ যেন নিপুণ হাতের পরশে বাগ-বাগিচার সৌন্দর্যে পেয়েছে নতুনরূপ। এসব বাগান মন-মনকে করে তোলে আকাশচারী ও স্বপ্নময়। স্বপ্নপুরীর রাস্তাগুলো একেকটি একেক রকম। একটি রাস্তার দুই পাশে উদ্বাহু হংসমিথুনের দল। আরেকটি রাস্তার দু’পাশে মাছ আকৃতির ফুলের টপ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কৃত্রিম চিড়িয়াখানায় প্রবেশের করার জন্য তৈরি করা হয়েছে চোখ ধাঁধানো রাস্তা। জীবন্ত চিড়িয়াখানায় প্রবেশের প্রধান ফটকটিতে রয়েছে বাংলার ঐতিহ্য, বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখাকৃতির এ ফটক পর্যটকদের শিহরিত করে তুলতে সদা প্রস্তুত।
 সব কিছু  মিলিয়ে বলা যায়, যে কোন পর্যটক যদি একবার স্বপ্নপুরীতে যান তাহলে সত্যিই আপনি স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাবেন। নিজেকে পশ্ন করবেন, এটা আমি কোন জগতে এসেছি নাকি ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখতেছি।

স্বপ্ন পরিতে প্রবেশ মূল্য বাস-মিনিবাস (যাত্রীসহ) চারশত টাকা। মাইক্রোবাস-পিকআপ (যাত্রীসহ) দুইশত টাকা। কার-জিপ টেক্সিক্যাব যাত্রীসহ একশত টাকা। গাড়ি ছাড়া গেলে জনপ্রতি বিশ টাকা।
স্বপ্নপুরীর বাংলো ভাড়া নীলপরী তিনশত টাকা (প্রতি ডবল রুম), রজনীগন্ধা চারশত টাকা(প্রতি ডবল রুম), নিশি পদ্ম পনেরশ টাকা (তিন রুমসহ বাংলো), চাঁদনী পাচশত টাকা (প্রতি ডবল রুম), সন্ধ্যা তারা আকশ থেকে তেরশ টাকা (প্রতি ডবল নন এসি ও এসি রুম) 
বিঃ দ্রঃ সময়ের সাথে মূল্য কম বেশি হতে পারে।
রাজধানী ঢাকা থেকে বুকিং ব্যবস্থাঃ
 ঢাকা থেকেও স্বপ্নপুরীর মোটেল বা বাংলো বুকিংয়ের সুবিধা আছে। ঠিকানা : হোটেলের সফিনা, ১৫২ হাজী ওসমান গনি রোড, আলুবাজার ঢাকা। ফোন : ৯৫৫৪৬৩০-৯৫৬২১৩০।

স্বপ্নপুরীতে রয়েছে খুব কম দামে খাবারের ব্যবস্থা : ভাত, সবজি, ডাল পনের টাকা, ভাত, সবজি, মাছ, ডাল বিষ টাকা ও ভাত, সবজি মুরগি, ডাল ৩০ টাকা।
বিঃ দ্রঃ সময়ের সাথে মূল্য কম বেশি হতে পারে। 
এছাড়াও স্বপ্নপুরীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পর্যটন সুবিধা দিতে একটি আধুনিক হোটেল, চাইনিজ  রেস্টুরেন্ট,  মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে স্বতন্ত্র স্পট, পাখির রাজ্য, বেলকার, রোপকার, মানবিক চৈতন্যে ভাস্কর্য শিল্প ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা মোতাবেক, যার নির্মাণ কাজ  শুরু হয়েছে। স্বপ্নপুরী ভ্রমণে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ।  




  স্বপ্নপুরী ভ্রমণে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ।   :)  :)